সম্পত্তি হতে বেদখল হওয়া বলতে মূলতঃ প্রকৃত মালিককে তার সম্পত্তি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা এবং সেখানে জবর দখলকারীর স্বত্ত্ব ও দখলের অবৈধ স্থাপনাকে বোঝায়। সম্পত্তি হতে বেদখল হওয়া বর্তমান বাংলাদেশে নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
ধরা যাক, রহিম নামে এক ব্যক্তির বাবা প্রায় ৩০ বছর আগে এক খণ্ড জমি কিনেছিলেন। প্রায় ১২ বছর আগে কিছু স্থানীয় বস্তির লোকজন হঠাৎ করে ওই জমি দখল করে নেয় এবং এখন পর্যন্ত তারা সেখানে অস্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে সেখানে অবস্থান করছে।
যেহেতু রহিম ও তার ভাই-বোনরা তখন ছোট ছিলেন এবং আর্থিক সংকটের কারণে তাদের পক্ষে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন তারা জমি উদ্ধারে আইন অনুযায়ী কী করতে পারে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলো।
বেদখল হওয়া সম্পত্তি ১৪৫ ধারায় উদ্ধারের পদ্ধতি
জমি বেদখল হয়ে গেলে, দখল পুনরুদ্ধারের জন্য ফৌজদারি এবং দেওয়ানী উভয় আদালতে মামলা করা যায়।
কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি/জমি থেকে বেদখল হওয়ার ২ (দুই) মাসের মধ্যে তিনি ঐ ব্যক্তিকে বেদখল করার চেষ্টা থেকে বিরত করার জন্য অথবা সম্পত্তিতে ঐ দখলকারী ব্যক্তির প্রবেশ বারিত করে আদেশ প্রদানের জন্য প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ অথবা ১৪৫ ধারার বিধান অনুসারে মামলা করতে পারবেন। এ ধরনের মামলাগুলো স্বল্প সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।
মামলা দায়ের করা হলে ম্যাজিস্ট্রেট অন্য পক্ষকে সমন জারি করবেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণের পর সম্পত্তির মালিক নির্ণয় করবেন। ঘটনাস্থল পুলিশী তদন্তের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার শনাক্ত করা হতে পারে। অতঃপর, আইনী উচ্ছেদের আদেশ জারি করা হতে পারে।এটাও উল্লেখ্য যে ১৪৫ ধারার অধীনে প্রতিকার চাইলে এখানে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না; বরং মালিকানা দাবিতে দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে।
এবার আসা যাক আলোচনার শুরুতে যে উদাহরণ দেওয়া হয়েছে তার দিকে। প্রথমেই বলেছি যে, সম্পত্তি হতে বেদখল হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই ফৌজদারী আদালতে মামলা করতে হয়। যেহেতু রহিম এর পিতা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ার কারণে ফৌজদারী আদালতে মামলা করতে পারেনি; এবং অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে রহিম ও তার ভাই-বোনেরা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৮ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে পারেন।
তবে, আইনটির ৮ ধারা অনুযায়ী, তাদেরকে ঐ জমিতে স্বত্ব বা মালিকানা আছে বলে প্রমাণ দিতে হবে। এছাড়াও এই ধারায় প্রতিকার চাইতে হলে তাদেরকে জমির স্বত্বসহ দখল ফিরে পাওয়ার দাবী করতে হবে। ৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। কাজেই তাদেরকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জমির মূল্যের উপর ভিত্তি করে সেই অনুপাতে কোর্ট-ফি জমা দিতে হবে।
Post a Comment
Post a Comment
To be published, comments must be reviewed by the administrator *