ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও অবিচ্ছেদ্য প্রতিবাদ

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০১৮ বা (DSA) এর সমালোচনায় যে কথাগুলো এতোদিন বলা হয়েছে, সেগুলো এই যে, এটি একটি Draconian বা কঠোর আইন। বলা হয়ে থাকে, এই আইনে এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা Vague বা খুব অস্পষ্ট। এই Vagueness বা অস্পষ্টতাকে ব্যবহার করে যাকে খুশি তার বিরুদ্ধে সরকার কিংবা তার তল্পি-বাহিনীর যে কেউ মামলা করে দিতে পারে এবং পুলিশ আপনাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। আইনটিতে পুলিশকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলেও বিশ্লেষণ রয়েছে। এ আইনের বাতিল চেয়ে সচরাচর যে কথাগুলো বলা হয়, সেগুলো এ রকম-

  • আইনটি নিবর্তনমূলক; 
  • ‘মুক্তবুদ্ধির’ চর্চার পরিপন্থী; এবং 
  • বাংলাদেশে ‘বাকস্বাধীনতার’ পরিসরকে সংকুচিত করছে। 

ডিজিট্যাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সম্পর্কে মতামতঃ

অনেকের মতে, আইনটির উদ্দেশ্যই একটি- ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ তৈরি করা, যাতে মানুষ প্রশ্ন করতে, কথা বলতে বা অভিযোগ করতে বা সরকারি দুর্নীতির সমালোচনা করতে ভয় পায়। কেউ কেউ মত দিয়েছেন যে, আইনটি সরকারের সমালোচনা এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থার সমালোচনাকে এক করে দেখা হয়। ফলে সরকারের সমালোচনাকে 'রাষ্ট্রদ্রোহিতার' শ্রেণীতে ফেলা হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, নেটিজেন, বুদ্ধিজীবীসহ দেশের তরুণদের একটি অংশ এবং সাংবাদিক নেতৃত্বের একটি অংশ (সম্পাদকীয় পর্ষদ) এই আইনের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ বহু বছর ধরে এই আইন বাতিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে। 

আইনটির নিয়ে বিশ্লেষণের যে ধারা সচরাচর পরিলক্ষিত হয় না, সেটি হচ্ছে উসকানিমূলক দিক। এটি নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে আইনে প্রবর্তন করে নাগরিকদেরকে সে বিষয়ে Social media বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করতে বিরত থাকতে বলার মধ্যে বা কিছু বিষয়কে Blasphemy হিসেবে চিহ্নিত করে ভয় দেখাতে অবিরত, সেগুলো সম্পর্কেই আরও কথা বলতে নাগরিকদের উস্কে দেয়। এ আইনের কারণে জেল জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মানুষ সঙ্গ পাচ্ছে। এটাকে ইতিবাচক বিষয় হিসেবে দেখা যায়। প্রতিবেশী ভারতেও বিভিন্নভাবে ‘বাকস্বাধীনতা’ হরণ, উগ্র-জাতীয়তাবাদের উত্থান ইত্যাদির প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা গেছে, যার ফলে সে দেশেও সরকারের তীব্র সমালোচনা হয়েছে।

এই আইনের কারণে বাংলাদেশে 'বাকস্বাধীনতা' এবং‘মুক্তবুদ্ধির’ চর্চার মতো বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা দেখা যায়। ১৯৭২ সালে রচিত বাংলাদেশের সংবিধানে 'বাকস্বাধীনতা' শব্দটির উল্লেখ থাকলেও এসব বিষয়ে কি কখনো ব্যাপক আলোচনা হয়েছে বা জনসাধারণের মধ্যে ‘মুক্তবুদ্ধির’ চর্চা হয়েছে? Seminar-Symposium এর থিম ছিল ‘মুক্তবুদ্ধি’ চর্চা। এর প্রচলন ছিল একাডেমিক ক্ষেত্রে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এই আইনের কল্যাণে সৃষ্ট দমন-পীড়ন বারবার ‘বাকস্বাধীনতা’ এবং ‘মুক্তবুদ্ধির’ চর্চা বিষয়গুলোকে জনসাধারণের মধ্যে নিয়ে এসেছে।

আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন ব্লগস্ফিয়ারে (যেগুলোর কোনো নির্দিষ্ট দেশ নেই), যার প্রভাব সমাজে কম নয়। এই আলোচনাগুলো একসময়ের উচ্চবর্গীয় সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের সংকীর্ণ সীমার বাইরে চলে গেছে এবং ডিএসএর শ্বাসরোধ দিনে দিনে নতুন জায়গা লাভ করছে। আইনটির ইতিবাচক ফলাফল হিসাবে, এই বিষয়গুলোকে আমাদের বিশ্লেষণ কাঠামোতে আনা প্রয়োজন।