Specific Relief Act

জাল দলিলের মাধ্যমে অন্যের সম্পত্তি দখলের উদাহরণ বাংলাদেশে কম নয়। পাঠকদের অবগতির জন্য নিচে জাল দলিল এবং সেগুলো বাতিল করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।বাংলাদেশ পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ধারা ৪৬৪ অনুযায়ী, নিম্নলিখিত তিন ধরণের  দলিল “জাল দলিল” এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন-

১. যে অসাধুভাবে কিংবা জালিয়াতি করে কোন দলিল বা দলিলের অংশ প্রস্তুত, স্বাক্ষর, মোহরকৃত করে বা সম্পাদন অথবা যে ব্যক্তি বা যার কর্তৃত্বে প্রস্তুত স্বাক্ষরিত, মোহরকৃত বা সম্পাদিত হয়নি বলে জেনে তা প্রস্তুত স্বাক্ষরিত মোহরকৃত বা সম্পাদিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করানো উদ্দেশ্যে কোন দলিলের সম্পাদন সূচক কোন চিহৃ দেয়।

২. যিনি, আইনসম্মত কর্তৃত্ব ব্যতীত, অসাধুভাবে নিজের দ্বারা বা অন্য কোন ব্যক্তির দ্বারা কোন দলিল প্রস্তুত ও সম্পাদিত হবার পর বাতিলক্রমে বা অন্য কোনোভাবে এর গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করে।

৩. যে ব্যক্তি অসততা বা প্রতারণামূলকভাবে একজন ব্যক্তিকে মানসিক অসুস্থতা বা নেশার কারণে বা জালিয়াতির কারণে পরিবর্তনের বিষয়বস্তু বা প্রকৃতি জানতে অক্ষম করে তোলে; অথবা জেনেশুনে সীলমোহরের অধীনে কোনো দলিল পরিবর্তন বা পরিবর্তন করলে, তিনি একটি মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করেছেন বলে গণ্য হবে।

একটি মিথ্যা দলিল যা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে জালিয়াতিভাবে প্রস্তুত করা হয় তাকে জাল দলিল বলা হবে। যদি কোন ব্যক্তি জালিয়াতি বা অসৎভাবে একটি জাল দলিলকে দলিল হিসাবে একটি জাল দলিল জ্ঞাতসারে ব্যবহার করার চেষ্টা করে, তাহলে সেই ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হবে যেন সে নিজেই নথিটি ৪৭১ ধারার অধীনে জাল করেছে৷

যেভাবে জাল দলিল বাতিল করবেন

একটি জাল দলিল যেভাবেই তৈরি করা হোক, মূল মালিক বা তার উত্তরাধিকারীদের ক্ষতি করতে পারে। তাই জাল দলিল সম্পর্কে জানার সাথে সাথেই জাল দলিল বাতিলের জন্য দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হবে। তামাদি আইনের ১ম তফসিলের ৯১ ধারা অনুযায়ী, জাল দলিল তৈরির বিষয়ে জানার ৩ বছরের মধ্যে মামলা করা যেতে পারে।

  • জালিয়াতির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪২০, ৪৬৩ থেকে ৪৭৩ ধারায় ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে।
  • জাল দলিল বাতিলের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৩৯ ধারার বিধান অনুসারে দেওয়ানী মামলা করা যাবে। এছাড়া সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪০ ধারা অনুসারে দলিল আংশিক বাতিলের মামলাও করা যাবে। 
  • জাল দলিল বাতিলের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ধারা ৩৯ এর বিধানের অধীনে দেওয়ানী মামলা করা যাবে। এছাড়াও, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের- ৪০ ধারা অনুযায়ী, দলিলের আংশিক বাতিলের জন্য একটি মামলাও দায়ের করা যাবে।

দলিল বাতিলের সাথে সম্পত্তির দখল পাওয়ার জন্যও মামলা করা যায়। আদালত দলিল বাতিলের আদেশ বা রায় প্রদান করলে ডিক্রীর একটি কপি বা অনুলিপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করবেন। উক্ত কপির ভিত্তিতে রেজিস্ট্রি অফিস দলিল বাতিলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বালাম বহিতে লিপিবদ্ধ করে রাখবেন। দলিল বাতিলের মামলায় কোর্ট ফি আইনের ২য় তফসিলের ১৭ (৩) অনুচ্ছেদে বর্ণিত কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে। দলিলে যার স্বত্ত্ব আছে তিনিই কেবল দলিল বাতিলের মামলা করতে পারবেন।