পেশাগতভাবে শুধুমাত্র আইনজীবীদেরকে 'বিজ্ঞ' বলে সম্বোধন করা হয়। তাই তাদের কর্ম ও আচরণে প্রজ্ঞার ছাপ থাকতে হবে। আত্মসম্মান রক্ষা করার জন্য, সমস্ত আইনজীবী, তা সে নতুন বা সিনিয়র হোক, আচরণ বিধি সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। অন্যথায় নিম্নোক্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে-
- সাধারণ মানুষ আইনজীবী এবং আইন-আদালতের উপর আস্থা হারাবে; এবং
- আইনজীবীর বার কাউন্সিলের সার্টিফিকেট বাতিল হতে পারে।
সম্প্রতি, পেশাগত অসদাচরণের জন্য অনেক আইনজীবীর বার কাউন্সিলের সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে। তাই নিম্নে আইনজীবীর পেশাগত আচরণবিধি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।
আইনজীবীর পেশাগত আচরণবিধিতে কী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে?
একজন আইনজীবীকে অন্যান্য আইনজীবী, মক্কেল, আদালত এবং জনসাধারণের প্রতি কেমন আচরণ করা উচিত সে বিষয়ে The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council order, 1972 এর অনুচ্ছেদ ৪৪(ছ) এর ভিত্তিতে Canons of Professional Conduct and Etiquette Act, 1965 (পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচার আইন, 1965 আইন) প্রণীত হয়েছে। এই আইনের চারটি অধ্যায় আইনজীবীদের পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচার নিয়ে আলোচনা করে। যথা:
১ম অধ্যায় - আইনজীবীদের পারস্পরিক আচরণ;
২য় অধ্যায় - ক্লায়েন্টদের প্রতি আচরণ;
৩য় অধ্যায় - আদালতের প্রতি দায়বদ্ধতা; এবং
৪র্থ অধ্যায় - জনসাধারণের প্রতি আইনজীবীদের আচরণ।
আইনজীবীদের আন্তঃব্যক্তিক আচরণ
(১) একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য একজন আইনজীবী হিসেবে তার ব্যক্তিগত মর্যাদা ও পেশাগত মর্যাদা সমুন্নত রাখা।
(২) একজন আইনজীবী তার নিজের পেশার বিজ্ঞাপন দেবেন না; যাইহোক, পেশাদার ভিজিটিং কার্ড, নেমপ্লেট বা ডিরেক্টরিতে নাম তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ নেই।
(৩) পেশাগত কাজের বিধানের জন্য কোন ব্যক্তি চাকরি বা বেতন হিসাবে অর্থ প্রদান করবেন না।
(৪) আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে প্রতিপক্ষের সাথে মামলা নিয়ে আলোচনা করবেন না।
(৫) বিপরীত পক্ষের কৌঁসুলির অনুপস্থিতিতে বা আদালতে বিচারাধীন বিষয়ের কপি বা নথি সরবরাহ করে আদালতে হাজির করা যাবে না৷
(৬) যদি একজন মক্কেল একটি মামলায় একাধিক আইনজীবী নিয়োগ করতে চান, তাহলে মক্কেলকে একজন আইনজীবী নিয়োগ করা থেকে বিরত রাখা যাবে না।
(৭) আইনজীবীদের নিজেদের মধ্যে বিবাদ এড়িয়ে চলতে হবে।
(৮) আইনজীবীরা কাজের উপর সম্পাদিত এক্সপ্রেস চুক্তির শর্তাবলী অনুসারে নিজেদের মধ্যে ফি বন্টন করবেন।
(৯) অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যাবলী সমুন্নত রাখা প্রত্যেক আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য।
(১০) জুনিয়র এবং জুনিয়র আইনজীবীরা সিনিয়র এবং সিনিয়র আইনজীবীদের সম্মান করবেন এবং সিনিয়র আইনজীবীরা জুনিয়র এবং জুনিয়র আইনজীবীদের তাদের কাজে সহায়তা করবেন।
(১১) একই মামলায় একাধিক অ্যাডভোকেট নিযুক্ত থাকলে, সিনিয়র অ্যাডভোকেট মামলা পরিচালনা করবেন।
মক্কেলের প্রতি আচরণ
(১) একজন আইনজীবী কখনই একজন মক্কেলের বিষয়-সম্পত্তির সাথে সংযুক্ত থাকবেন না।
(২) কোনো মক্কেলের দ্বারা পূর্বে বা বর্তমানে নিযুক্ত কোন আইনজীবী যিনি মামলা সম্পর্কিত মক্কেলের কোন গোপন তথ্য জানেন তিনি তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা লড়বেন না।
(৩) যদি একজন আইনজীবীর প্রতিপক্ষের সাথে কোন স্বার্থ থাকে, তবে তিনি তা প্রকাশ না করে উক্ত মক্কেলের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবেন না।
(৪) একজন আইনজীবী কখনই উভয় পক্ষের জন্য মামলা পরিচালনা করবেন না।
(৫) কোন উকিল, তার নিজের নামে বা বেনামে, একটি মামলার বিষয়-বস্তু যেমন বন্ধকী সম্পত্তি বা নিলাম সম্পত্তি ক্রয় করবেন না, বা পারিশ্রমিক বা দান হিসাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে গ্রহণ করবেন না৷
(৬) কোন আইনজীবী তার নিজের অর্থ বা সম্পত্তি কোন মক্কেলের সম্পত্তির সাথে একত্রিত বা মিশ্রিত করবেন না।
(৭) কোনো আইনজীবী নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়ে কোনো মামলায় বাদী বা বিবাদীকে কোনো পরামর্শ দেবেন না।
(৮) কোন আইনজীবী তার পেশাগত যোগ্যতায় কোন ব্যক্তিকে আইন ভঙ্গ করার পরামর্শ দেবেন না।
(৯) আইনজীবীরা পরামর্শ বা পরিষেবা প্রদানের জন্য যুক্তিসঙ্গত পারিশ্রমিক নিবেন। উপরন্তু, কোনো সহ-আইনজীবীর অনুরোধ বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে। একজন আইনজীবীর বিধবা ও এতিমদেরকে অন্য সব আইনজীবী বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করবেন।
(১০) একজন আইনজীবী, তার সম্মান রক্ষা করার জন্য, তার মক্কেলদের সাথে ফি বা পারিশ্রমিক সংক্রান্ত বিরোধ এড়াতে হবে।
(১১) মামলা পরিচালনা করার সময় একজন আইনজীবীর উচিত ব্যক্তিগত বিশ্বাস বর্ণনা করা পরিহার করতে হবে।
(১২) যদি একজন আইনজীবী নিজে কোনো মামলার সাক্ষী হন, তবে তাকে মামলাটি নিজে পরিচালনা না করে অন্য আইনজীবীর কাছে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
(১৩) বিশেষ কারণ ব্যতীত কোন আইনজীবীকে একটি নির্দিষ্ট দিনে মামলা করতে বাধ্য করা যাবে না।
আদালতের প্রতি দায়বদ্ধতা
(১) সম্মানজনকভাবে আদালতে হাজির হওয়া।
(২) মামলার বিরুদ্ধে কোন আইনজীবী পরামর্শ দেবেন না।
(৩) কোনো মিথ্যা তথ্য বা ভুল উপস্থাপনের মাধ্যমে কখনোই আদালতকে বিভ্রান্ত করবেন না।
(৪) বিচারকের একান্ত কক্ষে মামলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন না।
(৫) ন্যায়বিচারকে সহায়তা করার জন্য পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব; অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া নয়। তাই পাবলিক প্রসিকিউটর কোনো প্রমাণ আটকে রাখবে না বা চাপা দেবে না।
(৬) কোনো বিচারাধীন বিষয়ে সংবাদপত্রে কোনো তথ্য প্রকাশ না করা।
(৭) বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগকে প্রতিহত করা আইনজীবীদের কর্তব্য।
(৮) আইনজীবীকে যথাসময়ে আদালতে হাজির হতে হবে।
(৯) আদালত কর্তৃক আহ্বান করা হলে একটি নিরপেক্ষ আইনি মতামত প্রদান করা।
জনসাধারণের প্রতি আইনজীবীদের আচরণ
(২) প্রতিপক্ষের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।
(৩) কোন ব্যক্তিকে হয়রানি বা ক্ষতি করার জন্য কোন দেওয়ানী মামলা বা বাধা সৃষ্টি করা যাবে না।
(৪) কোন মামলার জন্য কোন আইনজীবী নিযুক্ত হতে বাধ্য নয়; তবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে দায়িত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা করবেন।
(৩) কোন ব্যক্তিকে হয়রানি বা ক্ষতি করার জন্য কোন দেওয়ানী মামলা বা বাধা সৃষ্টি করা যাবে না।
(৪) কোন মামলার জন্য কোন আইনজীবী নিযুক্ত হতে বাধ্য নয়; তবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে দায়িত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা করবেন।
(৫) একজন আইনজীবী যে কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, তা যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন।
(৬) কোন সরকারী কর্মকর্তা, বোর্ড, কমিটি বা সংস্থার সামনে উপস্থিত হওয়ার সময়, তিনি নিজেকে এবং যার পক্ষে তিনি হাজির হবেন তার পরিচয় জানাবেন।
(৭) কোনো মামলা সংক্রান্ত মামলায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে সেই মামলায় আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না।
(৮) একজন আইনজীবী অন্য কোন পেশা, ব্যবসায় বা বেতনভোগী কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসাবে অন্য কোন পেশা বা ব্যবসায় নিয়োজিত হবেন না।
পেশাগত অসদাচরণের জন্য শাস্তি
একজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আনীত পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল এই আইনের 32(1) ধারা অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত আইনজীবীকে আইনি পেশা থেকে তিরস্কার বা বরখাস্ত করতে বা পেশা থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করতে পারে।
Post a Comment
Post a Comment
To be published, comments must be reviewed by the administrator *